বর্ষাকালের রিমঝিম বৃষ্টি প্রচন্ড রোদের তাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে কিন্তু সেই সাথে বাড়িয়ে দেয় বিরক্তিকর সিজিনাল এলার্জির প্রকোপ। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির সাথে উড়ে আসা পরাগরেনু, ধূলিকণা, ও বাতাসের আদ্রতা ডাষ্ট এলার্জি এবং অ্যাজমা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও লাগাতার বৃষ্টি হওয়ার কারনে ভেজা জামাকাপড়, জুতা ইত্যাদির কারনে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বেড়ে যায় ফলে সর্দি, কাশি, ফ্লু, নাক দিয়ে পানি পড়া সহ পেটের সমস্যাও দেখা দেয়। এমনকি বাতাসে আদ্রতার মাত্রা বেশী বেড়ে গেলে হজম প্রক্রিয়াকেও ধীরগতি করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। তবে বর্ষাকালের এই রিমঝিম বৃষ্টিকে ভয়ের কিছু নেই, বিশেষজ্ঞদের মতে সঠিক খাবার এবং ক্ষতিকারক বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চললে সিজিনাল এলার্জির সংক্রমণ থেকে অনেকটায় রক্ষা পাওয়া যায়।
আজকে এমন কিছু খাবার নিয়েই আলোচনা করবো যেগুলো খেলে আপনি ও আপনার পরিবার সিজিনাল রোগ-বালাই থেকে অনেকটাই নিরাপদ থাকবেন। চলুন তাহলে শুরু করি।
১। মৌসুমি ফল
মৌসুমি ফল আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে দারুন ভুমিকা রাখে এই সময় দেশি ফল যেমন আম, লিচু, কাঁঠাল, তাল, জাম, পেয়ারা ইত্যাদি আপনার ইমিউন সিসটেমকে শক্তিশালী করে তোলে। এছাড়াও আপেল, বেদানা, পিয়ার, চেরি ইত্যাদি ফলও খুব উপকারী। তবে আপনার যদি শর্দি থাকে তাহলে তরমুজ এড়িয়ে চলা উচিত কারন এই অতিরিক্ত পানিযুক্ত ফল আপনার শর্দি কাশি বাড়িয়ে দিতে পারে।
২। স্যুপ এবং চা
গ্রীন টি, মশলা চা, অথবা যে কোন সাধারন চা বর্ষা মৌসুমে শরীরের জন্য খুব উপকারী। ভেজিটেবল স্যুপ অথবা সাধারন পাতলা ডালও এই আদ্র মৌসুমে আপনার শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাগুলো কমিয়ে ইমিউনিটি বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পরে। এমনকি চা এবং স্যুপ আপনার পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখতে এবং এজমার সমস্যা কমাতে দারুন কাজ করে।
৩। দই
দই একদিকে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকর একটি খাবার। অনেক ডাক্তারই দুধের পরিবর্তে দই খাওয়ার পরামর্শ দেয়। কারন দুধ ভালোভাবে ফোটানো না হলে অনেক প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু থেকে যেতে পারে যা স্বাস্থের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। অপরদিকে দই এ প্রোব্যায়োটিক ব্যাকটেরিয়া থাকে যা হজমে সাহায্য করে।
৪। ফলের জুস
ঘরে বানানো ফলের জুস যেমন আপেল এবং কমলার জুস শুধু সুস্বাদুই নয় বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্য উপকারীতাতেও ভরপুর যা বর্ষাকালে আপনার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আপেলের জুস লিভার থেকে
টক্সিন বের করতে সাহায্য করে একইসাথে শরীরে পি এইচ এর মাত্রা বাড়িয়ে পাকস্থলির নানা সমস্যা
প্রতিরোধ করে।
কমলার জুস ইমিউনিটি এবং মেটাবলিজম বাড়ায় এবং শরীরকে ডিটক্সিফাই করে তাই একে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর পানীয়গুলোর একটি ধরা হয়।
৫। সবজি
কাঁচা সবজি সরাসরি খাওয়া ঠিক নয় কারন সেগুলোতে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস থাকতে পারে যা মারাত্বক সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এতে পেটে ব্যাথা, ফুড পয়জনিং, এমনকি ডায়রিয়াও হতে পারে। তাই সবজি সবসময় ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে। কাঁচা সবজি খেলেও খুব ভালোভাবে পরিস্কার পানিতে ধুয়ে তারপর খাওয়া উচিত। সবজিতে থাকা উচ্চ মাত্রার প্রোটিন, ফাইবার, এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ত্বকের নানারকম সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
৬। আদা এবং রশুন
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ছাড়াও, আদা এবং রসুনে অ্যান্টি-ভাইরাল উপাদান রয়েছে যা জ্বর এবং সর্দি থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। আদা চা গলার অস্বস্তি দূর করতে সাহায্য করতে পারে, এক বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য আদা পাউডার বা এর রস মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যায়। রসুনে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল/এন্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে। এটি গ্রেভি, চাটনি, স্যুপ এবং অন্যান্য খাবারে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৭। ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ, চিংড়ি, নানা রকম বাদাম যেমন আখরোট, পেস্তা ইত্যাদি খাবারে প্রচুর পরিমানে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। বর্ষা মৌসুমে যখন খাদ্য ও পানির মাধ্যমে নানাবিধ সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায় তখন ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারন এতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান আছে যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।
পরিশেষে, এই আর্টিকেলের উদ্দেশ্য রোগ নির্নয় গোছের কিছু নয়। এখানে কেবল মাত্র বর্ষাকালে খাওয়া উপকারী এমন বিশেষ কিছু খাবার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই মৌসুমে শিশু থেকে বয়স্ক সকলেই কম বেশী ঠান্ডা জ্বর ও শর্দি কাশিতে ভুগে থাকে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা এবং সুষম খাবার গ্রহনের মাধ্যমে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। এতে অনেক ধরনের সংক্রমন এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
GIPHY App Key not set. Please check settings