অক্টোবর মাস শেষ হওয়ার আগেই বইতে শুরু করে দিয়েছে উত্তরের হিমেল হাওয়া। এ যেন শীতের আগাম বার্তা নিয়ে এসেছে। শীতের আবহাওয়া অনেক শুষ্ক হওয়ার কারনে আমাদের ত্বকও শুষ্ক হয়ে পড়ে। এর সাথে যদি পরিপূর্ণ যত্ন না নেয়া হয় তাহলে তো কথায় নেই, ত্বকের যাচ্ছেতাই অবস্থা হতে সময় লাগে না। চুল, ঠোঁট, মুখের চামড়ার পাশাপাশী পায়ের ত্বকও শীতে শুষ্ক হতে পারে। তাই ত্বক ও চুলের সাথে পায়ের যত্ন নেয়াও জরুরী। তা না হলে পায়ের গোড়ালী ফেটে যন্ত্রনাদায়ক হয়ে উঠতে সময় লাগবে না। তবে সস্তির বিষয় হল শীতে পা ফাটা রোধে কিছু ঘরোয়া প্রতিকার দারুন কাজ করে। আজকে আমরা তেমনি কিছু ঘরোয়া প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করবো।
পা ফাটার কারণ
পা ফাটা রোধ করার আগে এর কারনগুলো আমাদের জেনে নেয়া উচিত।
- নিয়মিত পা পরিস্কার না করা
- খালি পায়ে হাটা
- শক্ত জুতা ব্যবহার করা
- দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে কাজ করা
- ধুলোবালি ও অপরিস্কার স্থানে কাজ করা
- পর্যাপ্ত পানি ও স্বাস্থ্যকর খাবার না খাওয়া
- ভিটামিন সি ও ই এর অভাব
- বিভিন্ন চর্ম রোগ যেমন সোরিয়াসিস, পামোপ্ল্যান্টার কেরাটোডার্মা ইত্যাদি রোগের কারনেও পায়ের গোড়ালী ও পায়ের চামড়া আক্রান্ত হতে পারে। আর শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় সমস্যা আরো অনেক বেশী বেড়ে যেতে পারে।
শীতে পা ফাটা রোধে ঘরোয়া প্রতিকার
১। পা নিয়মিত পরিস্কার রাখুন
পায়ে ধুলাবালি ও ময়লা থাকলে পায়ের চামড়া রুক্ষ ও শক্ত হয়ে পড়ে। তাই গোসলের সময় পা ভালোভাবে পরিস্কার করা উচিত। অনেকেরই পা ঘামে। সেই ঘামের কারনেও পায়ের চামড়া ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। তাই শুধু গোসলের সময়ই নয়, বাইরে থেকে ফিরেই পা ভালোভাবে পরিস্কার করে নিতে হবে।
২। গোড়ালীর বিশেষ যত্ন নিন
পায়ের বিশেষ করে গোড়ালী ফাটা যেমন সৌন্দর্য হানি করে ঠিক তেমন যন্ত্রণাদায়কও। তাই গোড়ালীর বিশেষ যত্ন নেয়া দরকার। গোসলের সময় পায়ের গোড়ালীর মৃত শক্ত চামড়া ধুন্দলের খোসা বা ঝামা দিয়ে ঘষে তুলে ফেলতে হবে। তা না হলে মৃত চামড়ার ফাঁকে ময়লা জমে পায়ের আরো বেশী ক্ষতি হতে পারে।
৩। নারিকেল তেল ব্যবহার করুন
পা পরিস্কারের পরে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা জরুরী। শীতকালে নারিকেল তেল খুব ভালো ময়েশ্চারাইজারের কাজ করে। তাই সাবান ও গরম পানি নিয়ে ভালো ভাবে পা পরিস্কার করার পর নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। এতে পায়ের ত্বক নরম ও কোমল থাকবে। গোড়ালীতে এই তেল ভালোভাবে ম্যাসেজ করলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে। নারিকেল তেলের পাশাপাশি অলিভ ওয়েল, আমন্ড ওয়েল ও সরিষার তেলও ব্যবহার করতে পারেন।
৪। ভ্যাসলিন ব্যবহার করুন
উষ্ণ পানিতে শ্যাম্পু দিয়ে পা কিছুক্ষন ভিজিয়ে রাখুন। এবার একটি পিউমিস পাথর বা ব্রাশ দিয়ে ঘষে মৃত ত্বক তুলে ফেলুন। এবার একটি শুকনো তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে পায়ের পানি মুছে নিন। এবার ভ্যাসলিন বা ভালো কোন ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। রাতে শোয়ার আগে ভ্যাসলিন লাগিয়ে একটি মোজা পরে নিতে পারেন। এতে পায়ের ত্বক অনেক নরম হবে।
৫। গ্লিসারিন ব্যবহার করুন
কুসুম গরম পানি দিয়ে প্রথমে ভালোভাবে পা পরিস্কার করে নিন। এবার গ্লিসারিনের সাথে সমপরিমান গোলাপজল মিশিয়ে নিন। ত্বক নরম রাখতে গ্লিসারিন দারুন কার্যকর। অপরদিকে গোলাপজলে আছে এ, সি, ডি ও ই যা ত্বকের জন্য উপকারী। রাতে ফাটা ত্বকে গ্লিসারিন ও গোলাপজলের মিশ্রণ লাগিয়ে রাখলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। এতে ত্বক নরম হয় ও ব্যাথাও কমে।
৬। মধু ব্যবহার করুন
মধুতে অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান রয়েছে তাই ত্বকের যত্নে এটি খুবই ভালো কাজ করে। শীতকালে পায়ের ফাটা প্রতিরোধ করতে তাই নিয়মিত মধু ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
৭। বেসনের প্যাক ব্যবহার করুন
বেসন আমাদের ত্বক পরিস্কারে খুব ভালো কাজ করে। বেসনের সাথে দুধের সর, মধু ও কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এটি পায়ের গোড়ালীতে কিছুক্ষন লাগিয়ে রেখে ঘষে ঘষে ধুয়ে ফেলুন। এটি পা মুছে নিয়ে একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। ভিটামিন ই-ও লাগাতে পারেন।
পরিশেষে,
রুপচর্চায় শরীরের যে অংশটি সবচেয়ে অবহেলিত তা হল পা। কিন্তু দুখের বিষয় হল এই ফাটা পায়ের জন্যই আমাদের অনেসময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এই বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে শীতে পা ফাটা রোধে কিছু সহজ ঘরোয়া প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হল। আপনার পছন্দ ও সুবিধা অনুযায়ী আজ থেকেই এই প্রতিকারগুলো অনুস্মরন করা শুরু করে দিন। আর আসছে শীতে পা রাখুন ফাটাহীন, নরম ও কোমল।
GIPHY App Key not set. Please check settings