শীতের হিমেল হাওয়া বইতে শুরু করেছে সাথে ভোরে আকাশ থাকছে কুয়াশাচ্ছন্ন। এখন কম্বলের উষ্ণ আলিঙ্গন এবং মিষ্টি রোদ উপভোগের সময়। আমার কাছে কিন্তু শীতকাল মানে আরামদায়ক কম্বলের ভেতরে বসে গরম স্যুপ এবং গরম কফি পানের সময় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই ঋতু হল শুষ্ক ত্বক, চুল পড়া, রুক্ষ চেহারা এবং অ্যালার্জির সময়। তবে সুখের বিষয় হল খুব সাধারন কিছু উপায় মেনে চলে আমরা শীতকালেও প্রাণবন্ত ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে পারি। ভারতীয় চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দীপালি ভরদ্বাজ শীতকালে রুক্ষতা থেকে আপনার ত্বককে সুরক্ষিত রাখার ১০টি টিপস দিয়েছেন যা মেনে চললে আমরা এই সময়েও ত্বকের নিখুঁত উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে পারি।
ডঃ দীপালি ভরদ্বাজের মতে গ্রীষ্ম এবং শীতে আমাদের ত্বক এবং চুলের উপর সম্পূর্ণ আলাদা প্রভাব রয়েছে, এবং আমরা তা স্পষ্টভাবে অনুভবও করতে পারি। শীতের তীব্রতা ত্বককে শুষ্ক এবং সংকুচিত করে ফেলে, যা চেহারায় অকাল বার্ধক্য এবং একটি নিস্তেজ ছাপ ফেলে দেয়। শুধু তাই নয়, এটি ব্রণ, একজিমা এবং সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টিও করতে পারে। তবে কিছু সহজ পদক্ষেপ আপনার ত্বক এবং চুলকে তাদের পূর্বের মতই ঝলমলে আর প্রাণবন্ত করে তুলবে যদি আপনি ডাঃ দীপালি ভরদ্বাজের দেওয়া এই আশ্চর্যজনক টিপসগুলি অনুসরণ করে ভাল যত্ন নেন। চলুন দেখি টিপসগুলো কিঃ
১। গোসলে গরম পানি
গোসলের জন্য অবশ্যই হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। হালকা গরম পানি ত্বককে তার প্রাকৃতিক তেল হারানো থেকে রক্ষা করে, অপরদিকে গরম পানি ত্বককে খসখসে এবং অতিরিক্ত শুষ্ক করে। তবে আপনি যদি অপেক্ষাকৃত কিছুটা বেশী গরম পানিতে গোসল করতে চান তবে পানিতে নারিকেল তেল বা অলিভ ওয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন। এই তেল শরীরে একটি আবরণ তৈরি করে এবং প্রয়োজনীয় হাইড্রেশন নিশ্চিত করে।
২। ময়শ্চারাইজারের ব্যবহার
গোসলের পরে পরেই শরীরে ময়শ্চারাইজ লাগাতে ভুলবেন না। ত্বক আদ্র থাকতেই ময়শ্চারাইজার লাগানো উচিত। এতে আদ্রতা ত্বকে আটকে যায় এবং ত্বক হাইড্রেটেড এবং কোমল থাকে।
৩। স্ক্রাব ব্যবহার করা
শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় আমদের ত্বকের প্রচুর কোষ মরে যায়। এই মৃত কোষ অপসারন না করলে নতুন কোষ তৈরি হতে সমস্যা হতে পারে। তাই সপ্তাহে অন্তত একবার বা দুবার স্ক্রাব ব্যবহার করে ত্বক থেকে মৃত কোষ অপসারন করা জরুরী।
৪। নাইট ক্রিম
কর্মব্যস্ত সারাদিন পার করে আমরা অনেকেই নাইট ক্রিম ব্যবহারে অলসতা বোধ করি। কিন্তু নাইট ক্রিম ব্যবহারে একবারেই অলসতা করা যাবে না বরং একেবারে রুটিন মেনেই একে ব্যবহার করতে হবে। পারফিউম বা প্যারাফিন নেই এমন ক্রিম ব্যবহার করুন।
৫। পুষ্টিকর খাবার
পুষ্টিকর খাবার যেমন মিষ্টি আলু, শুকনো ফল, আমলকি এবং অন্যান্য মৌসুমি ফল ত্বক এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই এই সময়ে বাজারে প্রাপ্ত নানারকম রঙবেরঙের সবজি ও ফল নিয়মিত খাওয়া উচিত।
৬। পর্যাপ্ত পানি পান করা
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে বিশেষত ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে। আমাদের দেশে শীতপ্রবন এলাকার বেশিরভাগ বাড়িতে রুম হিটার ব্যবহার করা হয়। আর রুম হিটারের শুষ্ক বাতাস শীতের শুষ্কতাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
৭। ফুট ক্রিম ব্যবহার করা
আপনার পায়ের গোড়ালিতে পর্যাপ্ত পরিমানে ক্রিম (ফুট ক্রিম) লাগান কারণ গোড়ালির ত্বক অপেক্ষাকৃত পুরু ও বেশী শুষ্ক তাই তাদের অতিরিক্ত যত্নেরও প্রয়োজন। গোড়ালি ফাটার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সুতির মোজা পরুন। নিয়মিত ভালো মানের ময়শ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না।
৮। ব্লো ড্রাইং-কে না
ব্লো ড্রাইং-কে সম্পূর্ণ না বলুন। এমনকি প্রচন্ড শীতে যদি রোদ নাও থাকে তার পরেও ব্লো ড্রাই ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। শীতের শুষ্কতায় এমিনিতেই চুল ভঙ্গুর হয়ে যায়, আর শুধুমাত্র ব্লো ড্রাই ব্যবহারের কারনে চুল আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাই একে কঠোরভাবে এড়িয়ে চলুন। খুব বেশী প্রয়োজন হলে চুল শুকানোর জন্য ফ্যানের বাতাস ব্যবহার করুন।
৯। ঘরোয়া প্রতিকার
কয়েকটি ঘরোয়া প্রতিকার অবশ্যই হাতে রাখতে হবে। ফ্রিজ থেকে টক দই নিন এবং অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকে বা যেকোনো ধরনের র্যাশে সরাসরি লাগান। যদি আপনার ত্বক খুব শুষ্ক হয় তবে আপনি এতে ২/৩ ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে প্রায় ২০ মিনিটের জন্য রেখে দিন এবং তারপর গোলাপ জল বা সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার ত্বককে স্বাস্থ্যকর এবং নরম করবে।
১০। ভিটামিন ই
১০। আরেকটি কৌশল হল ভিটামিন ই (ইভিয়ন) ক্যাপসুল ব্যবহার করা। একটি ক্যাপসুল খুলুন এবং সরাসরি শুষ্ক ত্বকে প্রয়োগ করুন। এটি ২০ মিনিটের জন্য রেখে দিন তারপর একটি নরম সুতির কাপড় দিয়ে আপনার মুখটি আলতো করে মুছে নিন।
আশা করি আজকের আলোচিত এই সহজ টিপসগুলোর সাহায্যে আপনি আপনার ত্বকের প্রাকৃতিক জেল্লা এবং আপনার চুলের শক্তি ফিরে পেতে পারবেন সহজেই।
GIPHY App Key not set. Please check settings