শীতের রুক্ষতায় আমদের ত্বকের মারাত্বক ক্ষতি হতে পারে তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় মুখের ত্বক এবং ঠোঁটের। তবে খুব সাধারন কিছু ঘরোয়া উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে এই সমস্যার প্রতিকার আমরা ঘরেই করে ফেলতে পারি। প্রথম পর্বে আমরা এই বিষয়ে বেশ কিছু ঘরোয়া প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করেছি। দ্বিতীয় পর্বেও আমরা শুষ্ক ত্বকের যত্নে আরো কিছু চমকপ্রদ ঘরোয়া প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন তাহলে শুরু করি।
১। অ্যালোভেরা, মধু ও বাদাম তেল
অ্যালোভেরা ময়েশ্চারাইজিং ও ত্বকের জন্য পুষ্টিকর উপাদানে সমৃদ্ধ। আর এর সাথে যখন মধু ও বাদাম তেল মেশানো হয় তখন সেটা শুষ্ক ত্বকের জন্য আরো বেশী উপকারী হয়ে ওঠে।
কিভাবে ব্যবহার করবেন
অ্যালোভেরার একটি পাতা থেকে ২ টেবিল চামচ পরিমান জেল বের করে নিন। আপনি এটা নিজেও করতে পারেন অথবা বাজারে পাওয়া যায় এমন ভালো ব্র্যান্ডের রেডী অ্যালোভেরা জেলও নিতে পারেন। জেল-এ সমপরিমান মধু ও বাদাম তেল মিশিয়ে একটি নরম পেষ্ট তৈরি করুন। মুখে ও শরীরের অন্যান্য শুষ্ক ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ৩০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
২। দুধ, মধু এবং গোলাপ জল
আপনার শুষ্ক ত্বককে প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রদান করতে এবং হাইড্রেট করতে দুধ, মধু ও গোলাপজলের এই মাস্কটি দারুন কার্যকর। দুধ প্রাকৃতিক এবং সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ময়েশ্চারাইজারের একটি চমৎকার উৎস। এতে পানি, চর্বি, ও প্রোটিন থাকে যা ত্বকের হারিয়ে যাওয়া আদ্রতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। এছাড়া প্রাচীনকাল থেকেই ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে এবং ময়েশ্চারাইজ করতে মধু্র ব্যবহার হয়ে আসছে। আর এই দুইয়ের সাথে গোলাপজল মিশিয়ে তৈরি করতে পারেন শুষ্ক ত্বকের জন্য অসাধারন এক ফেস মাস্ক।
কিভাবে তৈরি করবেন
দুই টেবিল চামচ দুধ, ১ টেবিল চামচ মধু এবং ১ টেবিল চামচ গোলাপজল মিশিয়ে একটি মাস্ক তৈরি করুন। পরিস্কার কটন বল দিয়ে শুষ্ক ত্বলে লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
৩। দুধের সর ও কলা
এই মাস্কটি তৈরির জন্য আপনার প্রয়োজন হবে ফ্রেস ক্রিমের যেটা দুধের সর দিয়ে সহজেই তৈরি করে নিতে পারবেন। দুধ ফুটিয়ে ঠান্ডা করার পর উপরে যে সর পড়ে তার সাথে পাকা কলা দিয়ে এই মাস্কটি বানাতে হবে। আপনি হয়ত জানেন যে দুধের সর ফ্যাটের একটি খুব ভালো উৎস। আর পাকা কলার সাথে যখন একে মেশানো হয় তখন এর কার্যকারীতে দ্বিগুণ হয়ে যায়। প্রাকৃতিকভাবে শুষ্ক ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে এই মাস্কের জুড়ি মেলা ভার।
কিভাবে তৈরি করবেন
একটি পরিস্কার বাটিতে দুধের সর তুলে রাখুন। এতে একটি পাকা কলা চটকে নিন। প্রয়োজন হলে হ্যান্ড হুইস্ক দিয়ে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিতে পারেন। এই মাস্কটি মুখে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
উপরের ফেস মাস্কগুলো ব্যবহার করা ছাড়াও আপনার শুষ্ক ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন জরুরী। চলুন দেখি ত্বকের সুরক্ষার জন্য কি করবেনঃ
১। ত্বক পরিস্কার রাখতে হবে
আপনার ত্বক যেহেতু শুষ্ক তাই একে নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে। মুখে মেকআপ থাকলে ময়েশ্চারাইজ যুক্ত ক্লিঞ্জার দিয়ে মুখ পরিস্কার করে নিতে হবে।
২। ভিটামিন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন করুন
আপনার খাদ্যতালিকাতে ভিটামিন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। ত্বককে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর রাখতে ভেতর থেকে পুষ্টির যোগান দেয়া দরকার। তাই আপনার খাদ্য তালিকাতে ভিটামিন ও প্রটিন সমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত পরিমানে রাখুন।
৩। পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমান
ঘুম মানুষের শরীর মনের উপর মারাত্বক প্রভাব রাখতে পারে। তাই শারীরিক ও মানুসিক সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। বিশেষ করে ত্বক ভালো রাখার জন্য একেবারেই রাত জাগা যাবে না। ঘুমের মধ্যে আমাদের কোষের বৃদ্ধি ভালো হয় তাই নিয়মিত ৬-৮ ঘন্টা ঘুম নিশ্চিত করুন।
৪। উষ্ণ পানিতে গোসল করুন
শীতকালে আমরা অনেকেই গরম পানিতে গোসল করি। কিন্তু বেশী গরম পানি আমাদের ত্বক এবং চুলের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। তাই হালকা গরম বা উষ্ণ পানিতে গোসলের অভ্যাস করুন।
৫। প্রচুর পানি পান করুন
শরীর হাইড্রেটেড থাকলে ত্বকও থাকে ঝলমলে ও উজ্জ্বল থাকে তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতেই হবে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পানি পান করলে প্রস্রাবের সাথে শরীরের টক্সিন বের হয়ে যায় ফলে শরীর অনেক ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পায়।
শুষ্ক ত্বককে প্রাণবন্ত রাখতে উপরে উল্লেখিত ঘরোয়া প্রতিকারগুলো খুবই কার্যকর। তবে এগুলোর পাশাপাশি ত্বকের সুরক্ষার জন্য আপনার জীবনযাপন ও স্বাস্থ্যকর হওয়া জরুরী। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন, পর্যাপ্ত ঘুম ও পানি পান এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন। এতে আপনার শরীর ও মন দুটোই থাকবে তরতাজা ও ঝরঝরে।
GIPHY App Key not set. Please check settings