কোন আনন্দঘন মুহূর্তে যখন প্রাণখুলে হাসবেন শিশুরা ঠিকই বুঝতে পারে আপনার আনন্দের মাত্রা। সেই শিশুমনও তখন অংশগ্রহণ করে আর তার চারপাশের পরিবেশকে করে তুলে আরো আনন্দময়। শিশুদের অনুভূতিগুলো এতটাই সুক্ষ্য যে বড়রাও অনেক সময় বুঝার ক্ষমতা রাখেনা। তারা ঠিকমতো কথা বলতে শিখার আগেই পৃথিবীর অনেক কিছুর সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেয়। অনেক ক্ষেত্রে বড়দেরকেও হার মানায়। কখনও কখনও তাদের স্মার্টনেস দেখে মনে হয় বড়রা বুঝি কেবল উচ্চতাই তাদের থেকে বড়!
আনন্দঘন মুহূর্তে তারা অংশগ্রহণ করে বলে তাদের আনন্দ দেবার জন্য মিথ্যে অভিনয় করবেন! লাভ নেই। তারা সেটাও বুঝতে পারে। অতি সম্প্রতি কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় এমনটিই দেখা গেছে। আপনার সত্যিকারের মানসিকতা এবং তার প্রতিক্রিয়ায় যদি ভিন্নতা থাকে তবে সেটাও তারা বুঝতে পারে। এতে শিশুর কোন উপকার হয়না। বরং সে প্রতারণা করার শিক্ষা পায়। “ইনফান্সি: দ্যা অফিসিয়াল জার্নাল অফ দ্যা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অন ইনফান্ট স্টাডিস” নামে ঐ গবেষণা প্রকাশনায় বলা হয় বেশিরভাগ শিশুরাই ১৮ মাসের মধ্যেই সত্য উপলব্ধি করার এই ক্ষমতা অর্জন করে। তখন তারা পরিস্কার বুঝতে পারে কোন্ অনুভূতি কি ধরণের প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
১৫ থেকে ১৮ মাস বয়স পর্যন্ত ৯২ জন শিশুর উপর গবেষণা করে এ ধরণের ফলাফল পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা যায় মন ভার করে থাকা প্রাপ্তবয়স্ক, যারা তাদের শিশুদের আনন্দ দেবার জন্য হাসিখুশি অঙ্গভঙ্গি (facial expression) করে তাদের আসল অনুভূতি এবং প্রতিক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য ১৫ মাসের শিশুরা বুঝতে পারেনা। তবে ১৮ মাসের মধ্যেই এই পার্থক্য বুঝতে শিখে তারা।
জন্মের পরেই যে শিক্ষাজীবন শুরু হয় সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পরিবার। আর শিক্ষক হচ্ছেন বাবা, মা। প্রধান শিক্ষক হচ্ছেন মা। পরিবার নামক এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে। তাদের মেধা, মানসিকতা এবং ভবিষ্যতের দিক্ষা পায় বাবা মার কাছ থেকে। এজন্য শিশুদের মনকে বুঝা খুব দরকার। সে কি চায় তা জানা দরকার। শুধুই অর্থ, বিলাসিতা নাকি বাবা মার সান্যিধ্য। বদ্ধ ঘর, বন্ধ জানালা নাকি খোলা আকাশ।
গোল্ড ফিসের মস্তিস্কধারী জাতি আমরা অনেকেই ঐশীর কথা মাত্র কয়েক মাসেই ভুলে গিয়েছি। নানা কারণে ভুলতে পারিনি আমি। ঘটনাটা আমাকে প্রচণ্ডভাবে ভাবিয়েছিল।
যাহোক, সরকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের একটি ফেস্টুনে পাওয়া মহাবাণীগুলো শেয়ার করলাম। মানতে পারলে বৃথা যাবে না। ঐশীরা আর জন্মও নিবে না।
[box type=”note” ]শিশুরা যদি সমালোচনা শুনতে শুনতে বড় হয়, তাহলে তারা নিন্দা করতে শিখে।
শিশুরা যদি শত্রুতার মধ্যে বড় হয়, তাহলে তারা মারামারি করতে শিখে।
শিশুরা যদি ভয়ের মধ্যে বাস করে, তবে তারা হীনমন্যতায় ভোগে।
শিশুরা যদি দুঃখ্যে বাস করে, তবে তারা সব সময় কষ্ট অনুভব করে।
শিশুরা যদি উপহাস পেয়ে বড় হয়, তবে তারা লাজুক হয়।
শিশুরা যদি হিংসার মধ্যে বড় হয়, তবে তারা প্রতিহিংসা শিখে।
শিশুরা যদি সব সময় লজ্জা পেয়ে বড় হয়, তবে তারা নিজেকে দোষী ভাবতে শিখে।
শিশুরা যদি উৎসাহ পেয়ে বড় হয়, তবে তাদের আত্নবিশ্বাস বাড়ে।
শিশুরা যদি সহনশীলতার সহিত বাস করে, তবে তারা ধৈর্যশীল হতে শিখে।
শিশুরা যদি প্রশংসার সহিত বাস করে, তবে তারা মর্যাদা দিতে শিখে।
শিশুরা যদি গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে বড় হয়, তবে তারা ভালবাসতে শিখে।
শিশুরা যদি অনুমোদন পায়, তবে তারা নিজেকে পছন্দ করতে শিখে।
শিশুরা যদি স্বীকৃতি পায়, তবে তারা ভালো উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে পারে।
শিশুরা যদি সহভাগিতার মধ্যে বাস করে, তবে তারা উদারতা শিখে।
শিশুরা যদি সততার সাথে বাস করে, তবে তারা সত্যবাদী হতে শিখে।
শিশুরা যদি স্বচ্ছতার সাথে বড় হয়, তবে তারা ন্যায়বিচার করতে শিখে।
শিশুরা যদি দয়া এবং বিবেচনার সাথে বাস করে, তবে তারা সম্মান করতে শিখে।
শিশুরা যদি নিরাপত্তার মধ্যে বাস করে, তবে তারা নিজেদের প্রতি বিশ্বাস অর্জন করে।
শিশুরা যদি বন্ধু সুলভ আচরণ পায়, তবে তারা পৃথিবীকে বাস করার মত সুন্দর জায়গা মনে করতে শিখে।
[/box]
GIPHY App Key not set. Please check settings