in

বিখ্যাত যে ১০টি প্রতিষ্ঠান চলে লিনাক্সে

শিরোনাম পড়ে যেকোন সাধারন কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের ভ্রু চুককানোই স্বাভাবিক। এমনকি কম্পিউটার নামক যন্ত্রটি যে একটি অপারেটিং সিস্টেমের সাহায্যে চলে তাই হয়ত অনেকের অজানা। তারমধ্যে বাংলাদেশে পাইরেটেড অপারেটিং সিস্টেমের যেমন ছড়াছড়ি তাতে না জানারই কথা। তাই লিনাক্স আবার কি জিনিস এমন প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন।

লিনাক্স পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ওপেনসোর্স অপারেটিং সিস্টেম। কিন্তু অনেকেই মনে করেন লিনাক্স উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের চেয়ে অনেক জটিল। কিন্তু লিনাক্স ব্যবহারের পদ্ধতি একবার শিখতে পারলে পরবর্তীতে তা ব্যবহার করা অনেক সহজ। তবে ব্যাক্তিগতভাবে উইন্ডোজের ব্যবহার Companies-using-linuxবেশি হলেও বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা কর্মক্ষেত্রে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমই বেশি ব্যবহৃত হয়। আর বিশেষ করে সার্ভার নিয়ে কাজ করতে গেলে তো লিনাক্সের কোন বিকল্পই চিন্তা করা যায় না। এর প্রধান কারণ লিনাক্সের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক শক্তিশালী। লিনাক্সে কোনো ভাইরাস আক্রমণের ভয় নেই। আর এই অপারেটিং সিস্টেমটি খুব সহজেই নিজেদের যে কোনো কাজের জন্য মডিফাই করে নেয়া যায়।

এবার দেখে নেয়া যাক বিশ্বের নামিদামি কিছু প্রতিষ্ঠান যারা সবাই লিনাক্স ব্যবহার করে

১. গুগল: অবাক হওয়ার কিছু নেই। ইন্টারনেট জায়ান্ট গুগল তাদের সকল কাজকর্ম লিনাক্সের মাধ্যমেই পরিচালনা করে। গুগলের ইঞ্জিনিয়াররা লিনাক্সের একটি জনপ্রিয় ডিস্ট্রো কাস্টমাইজ করে গুবুন্টু হিসেবে ব্যবহার করছে। এভাবেই গুগলের সকল সেবাগুবুন্টুর মাধ্যমেই পরিচালিত হয়।

২. উইকিপিডিয়া: অনলাইনের সবচেয়ে জনপ্রিয় এনসাইক্লোপিডিয়া (উইকিপিডিয়া) ২০০৮ সাল থেকে উবুন্টু ব্যবহার করে আসছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা লিনাক্সের আরেকটি জনপ্রিয় ডিস্ট্রো রেড হ্যাট ব্যবহার করে থাকে। তবে এডমিনিস্ট্রেশন এর অংশগুলোতে উবুন্টুই ব্যবহার করা হচ্ছে।

৩. ইউএস প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা: লিনাক্স ডট কম-এ প্রদত্ত তথ্য অনুসারে ইউএস প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাতেই সবচেয়ে ব্যাপক আকারে রেড হ্যাট লিনাক্স ব্যবহৃত হচ্ছে। লিনাক্স যেভাবে খুশি চালানো যায় বলেই বিশাল ইউএস প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষেত্রটি সুচারুরূপে পরিচালিত হচ্ছে। এর কোনো একটি ছোট ত্রুটিও অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

৪. ইউএসএ নেভি ও সাবমেরিন: FreeSoftwareMagazine.com এর তথ্যানুসারে ইউএসএ নেভি এবং নিউক্লিয়ার সাবমেরিনেও লিনাক্স ব্যবহৃত হচ্ছে।

৫. স্পেনের সব সরকারী প্রতিষ্ঠান চলে লিনাক্সে: লিনাক্সের সবচেয়ে বড় সাপোর্টার দেশ হিসেবে স্পেন বহুল পরিচিত। স্পেনে ২০০২ সাল থেকে সকলের কাছে লিনাক্স পৌঁছে দেয়ার জন্য স্পেন সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়। স্পেনের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানেই লিনাক্স ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া জনগনের মাঝে লিনাক্স পৌঁছে দেয়ার পদক্ষেপ হিসেবে সকল সরকারি কর্মচারিদের লিনাক্স সিডি প্রদানের পাশাপাশি ম্যাগাজিন এমনকি খবরের কাগজের সাথেও লিনাক্সের সিডি দেওয়া হতো। আর সে কারণেই স্পেনে লিনাক্স ব্যবহারকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

৬. ফ্রান্স সংসদ: ফ্রান্সের বিশাল সংসদ ভবনের সকল কম্পিউটারেই ২০০৬ সাল থেকে লিনাক্স ব্যবহৃত হচ্ছে। তারা সকলকে ওপেনসোর্স সফটওয়্যার ব্যবহারে উৎসাহিত করে যাচ্ছে। এসব কম্পিউটারে বেশিরভাগ সফটওয়্যারই ওপেনসোর্স। ওয়েব ব্রাউজার হিসেবেও তারা ওপেনসোর্স ফায়ারফক্সকেই বেছে নিয়েছে। এছাড়া তারা ই-মেইলের জন্য ওপেনসোর্স ই-মেইল ক্লায়েন্টও ব্যবহার করছে।

৭. চিনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও কমার্শিয়াল ব্যাংক: চীনের সবচেয়ে বড় এই ব্যাংকে ২০০৫ সাল থেকে লিনাক্স ব্যবহার করা শুরু হয় এবং ২০০৮ সালের আগেই তারা প্রতিটি ব্রাঞ্চেই লিনাক্স ব্যবহার শুরু করে।

৮. বড় বড় স্কুল কলেজ: রাশিয়ায় ২০০৭ সালে ঘোষনা দেয়া হয় যে, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লিনাক্স চালানো বাধ্যতামূলক। কারণ বাংলাদেশের মতোই এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় সবগুলোতেই পাইরেটেড উইন্ডোজ চালানো হতো। এরপর ধীরে ধীরে সকলশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই লিনাক্স ব্যবহার শুরু হয়। জার্মানির সকল ইউনিভার্সিটি গুলোকে ২০০৭ সালেই লিনাক্সের আওতায় আনা হয়। সুইজারল্যান্ডে আরও আগে ২০০৫ সাল থেকেই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লিনাক্স ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারত এর অধিকাংশ প্রদেশেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লিনাক্স ব্যবহৃত হচ্ছে। পাকিস্থানেও একই অবস্থা। সারা বিশ্বব্যাপি পরিচালিত ‘একজন শিশুর জন্য একটি ল্যাপটপ’ প্রোগ্রামটিতেও লিনাক্স ব্যবহার করা হয়েছে।

৯. এমাজন: ইন্টারনেটে বইপত্র ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী বিক্রয়ের বড় প্লাটফর্ম এমাজন ডট কম ২০০১ সালের পর থেকে লিনাক্স ব্যবহার শুরু করে। শুধুমাত্র ২০০৪ সালে লিনাক্সের কারণে এই কোম্পানির ১৭ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়। বর্তমানে এমাজন.কমের সকল কম্পিউটারেই লিনাক্স ব্যবহৃত হচ্ছে।

১০. প্যানাসনিক: ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যর বাজারে জনপ্রিয় প্যানাসনিক কোম্পানিও তাদের কাজের জন্য লিনাক্স ব্যবহার করে। লিনাক্স ব্যবহারের পূর্বে কোম্পানিটিতে উইন্ডোজ ব্যবহার করা হতো। তবে উইন্ডোজকে যে কোনো কাজের জন্য কাস্টমাইজ করা যায় না বলে, সেই উইন্ডোজের জন্যই এই কোম্পানিকে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এরপর তারা লিনাক্স ব্যবহার শুরু করে এবং তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী লিনাক্সের একটি কাস্টমাইজ সংস্করন তৈরি করে তা আজও সফলতার সাথে ব্যবহার করে আসছে।

উপরে শুধুমাত্র কয়েকটি জনপ্রিয় ও বড় সেক্টরে লিনাক্সের ব্যবহারের উদাহরণ দেয়া হয়েছে। এরকম আরও অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে যেগুলোতে লিনাক্স ব্যবহৃত হচ্ছে। পাশাপাশি ছোট ছোট কর্মক্ষেত্রগুলো তো থাকছেই। বাংলাদেশেও অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান সহ ছোট প্রতিষ্ঠান গুলোতেও লিনাক্সের ব্যবহার শুরু হয়েছে। তাই বাংলাদেশে রয়েছে দক্ষ লিনাক্স অপারেটরদের জন্য অফুরন্ত কাজের সূযোগ। এছাড়া অন্য কাজের পাশাপাশি লিনাক্স শেখার মাধ্যমেও নিজের কাজের পরিধিটাকে বৃদ্ধি করা যায়।

পরে আবার দেখা হবে অন্য এক টিউন এ। পোস্টটি ভাল লাগলে আমার ব্লগে ঘুরে আসবেন

What do you think?

Written by Naim

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

শেয়ার বাজার সম্পর্কে কিছু পরামর্শ

গরমে চুল এবং ত্বকের যত্নে ৪টি হারবাল রেসিপি